বাগান করা: সুস্থ জীবনের সুন্দর পথ

বাগান করার উপকারিতা অনেক

মানুষ প্রকৃতির সন্তান। প্রকৃতি থেকে দূরে সরে যাওয়া কখনোই মানুষের জন্য মঙ্গলকর নয়। অথচ, জীবনের নানা দাবি মেটাতে গিয়ে আজকাল আমরা অনেকটাই কৃত্তিম পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হই। এই কৃত্তিমতার আবহে আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের শারীরিক ও মানসিক সজীবতা, যার অনিবার্য পরিণতি নিত্য নতুন রোগব্যাধির উপদ্রব। এই অবস্থায় সুস্থ ভাবে বাঁচতে চাইলে বাড়িতে বাগান করা ও গাছ লাগানোর সত্যিই কোনো বিকল্প নেই।

বাগান করার উপকারিতা

সৌন্দর্যায়ন

আজকের পৃথিবীতে প্রায় ৫৫% মানুষ শহরবাসী। ভারত ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতেও প্রায় ৩৫% মানুষ আজকাল শহরাঞ্চলে বাস করেন। এই শহরবাসী মানুষদের জন্য নিজের বাসস্থানটিকে সুন্দর করে সাজানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো বাগান করা ও গাছ লাগানো। অবশ্য যারা গ্রামে থাকেন তাদের জীবনেও বাগান করার উপকারিতা কম নয়।

এখন প্রশ্ন হলো, শহরবাসী মানুষেরা কোথায় সাজাবেন তাদের সাধের বাগান? বাগান করার জন্য শহুরে বাড়িতে যদি এক চিলতে মাটি পাওয়া যায় তাহলে সেটা দারুণ ব্যাপার। না পাওয়া গেলেও কুছ পরোয়া নেই। যে কোনো বাড়ির বারান্দা বা ছাদেও খুব সহজেই বাগান করা যায়। আবার টবের সাহায্যেও আমরা নানান ইনডোর গাছ ঘরে রেখে ঘর সাজাতে পারি।

খাদ্য উৎপাদন

ঘর সাজানোর জন্য ফুলের গাছ বা পাতাবাহার লাগানো ছাড়াও আমরা বাগানে কিছু পরিমানে শাকসব্জি ও ফলমূলের চাষ করতে পারি। রাসায়নিক সার ও বিষ ব্যবহার না করে জৈব পদ্ধতিতে এগুলো আমরা নিজেদের বাগানে ফলিয়ে নিতে পারি।

বাজার থেকে কেনা কৃষিজ ফসলগুলো সাধারণত প্রচুর পরিমানে রাসায়নিক সার ও বিষ দিয়ে উৎপন্ন হয়। এক ভারতেই প্রতি বছর আনুমানিক ২০০০০ টন নাইট্রোজেন-যুক্ত সার ও ৭০০০০ টন বিষ ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়াও প্রায়শই বাজারি খাদ্যে মেশানো থাকে ক্ষতিকর রাসায়নিক রঙ ও ভেজাল। এই সব খাদ্য ধীরে ধীরে আমাদের স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করে দেয়।

বাজার থেকে কেনা খাদ্যগুলোর বদলে আমরা যদি বাড়ির বাগানে উৎপন্ন টাটকা শাকসব্জি ফলমূল অন্তত কিছুটা পরিমানেও খেতে পারি, তবে সেটা হবে একটা বিরাট লাভ।

ছাদেও করা যায় বাগান

বাড়ির ছাদে সাধের বাগান

দূষণমুক্ত পরিবেশ

বাড়ির বাইরে ও ভেতরে গাছেদের উপস্থিত আমাদের বাসস্থানের পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। বাগানের গাছেরা বায়ুতে প্রচুর অক্সিজেন যোগ করে। অনেক গাছ নানারকম বিষাক্ত পদার্থ বায়ু থেকে শোষণ করতে দারুণ কাজে দেয়। এ প্রসঙ্গে বায়ু শোধক ইনডোর গাছগুলোর কথা বলা যায়, যেমন—

  • স্নেক প্ল্যান্ট,
  • অ্যালোভেরা,
  • পিস লিলি,
  • মানি প্ল্যান্ট,
  • স্পাইডার প্ল্যান্ট,
  • এরিকা পাম,
  • এগ্লোনিমা,
  • ক্রোটন, ইত্যাদি।

ঘরের ভেতরে টবের সাহায্যে এই ইনডোর গাছগুলো সহজেই রাখা যায়। এই গাছগুলো বায়ু থেকে নানান বিষাক্ত বাষ্প, যেমন, ফরম্যালডিহাইড, বেনজিন, জাইলিন, টলুইন, ইত্যাদি শোষণ করে নিয়ে ঘরের পরিবেশকে শুদ্ধ রাখে [wikipedia]। এই গাছগুলো দেখতেও খুব সুন্দর।

ইনডোর গাছ

বাগানে বড়ো প্রাপ্তি শারীরিক সুস্থতা

বাড়ির বাগানে গাছপালার যত্ন নিতে গিয়ে আমরা অজান্তেই নিজেদের শরীরের অনেক যত্ন নিয়ে ফেলি। বাগানের খোঁড়াখুঁড়ি, মাটি তৈরি, গাছে জল দেওয়া, এই সব কাজ করতে করতে আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঞ্চালন হয়, শরীরে রক্ত সংবহন ভালো হয়। এতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সম্ভবনা কমে। বাগান করলে Osteoporosis জাতীয় হাড়ের রোগের সম্ভবনা কমে। বাগানে পরিমিত শারীরিক শ্রম হওয়ার সুবাদে রাতে খুব সুন্দর ঘুম হয়। এছাড়াও বাগান করার সময় আপনি যদি কিছুটা সময় শরীরে রোদ লাগিয়ে নিতে পারেন তাহলে সোনায় সোহাগা। কারণ এর ফলে আপনার দেহে উৎপন্ন হবে D-ভিটামিন। এটা আপনার ইমিউনিটিকে চাঙ্গা রাখবে, আপনাকে নানা অসুখবিসুখ, এমনকি ক্যানসার প্রতিরোধেও সাহায্য করবে [britanica]।

মানসিক সজীবতার উৎস সবুজ

বাগান করার ক্ষেত্রে মানসিক পরিপূর্ণতার দিকটাও কম নয়। সবুজের সান্নিধ্য আমাদের মনকে সবুজ করে তোলে। বাগানে নিজের হাতে লাগানো গাছপালার বেড়ে ওঠা বা সেগুলোতে ফুল ফোটা দেখলে আপনি যে অনাবিল আনন্দ পাবেন তার কোনো তুলনা হয় না।

বাগান করা আমাদের মনকে ভারমুক্ত ও চাপমুক্ত রাখার দুর্দান্ত উপায়। গবেষণায় জানা গেছে, সবুজের আবাহনে মানবদেহে cortisol জাতীয় স্ট্রেস সৃষ্টিকারী হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়, উল্টোদিকে বেড়ে যায় endorphins জাতীয় সুখানুভূতি সৃষ্টিকারী হরমোনগুলোর ক্ষরণ। তাই আধুনিক যুগের জটিল জীবনে মানসিক শান্তি ও সুস্থতা বজায় রাখতে চাইলে বাগান চর্চা এক অনবদ্য উপায়

বাগান করা কঠিন কিছু নয়

আপনি যদি ভেবে থাকেন যে বাড়িতে গাছ লাগানো বা বাগান করা খুব কঠিন কাজ, তবে ভুল করছেন। শুরু করলেই বুঝতে পারবেন, এটা মোটেই কঠিন কিছু নয়। বাড়ির লাগোয়া একচিলতে মাটিতে, বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় কিংবা ঘরের ভেতরে টব রেখে পছন্দ মতো গাছ লাগানো শুরু করে দিন। দরকার মতো পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধবের পরামর্শ নিন। ইচ্ছে হলে নেট ঘেঁটে গাছপালা সম্পর্কে একটু পড়াশোনাও করে নিতে পারেন। তাছাড়া ফেসবুক তো আছেই। ফেসবুকে বাগান চর্চার অনেক গ্রুপ আছে, যেখান থেকে আপনি বাগান করা সম্পর্কে বহু বিচিত্র আইডিয়া পেয়ে যাবেন।

আসলে কি জানেন, বাগান চর্চা এমনই এক নেশা যেটা একবার ধরলে আর কখনোই ছাড়া যায় না। তবে হ্যাঁ, এই নেশায় আমাদের ক্ষতি কিছু নেই, শুধুই লাভ। [ছবিগুলি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]