মানি প্ল্যান্ট খুব সুন্দর ইনডোর গাছ। এই গাছ ঘর সাজাতে যেমন কাজে লাগে, তেমনই ঘরের বাতাস শুদ্ধ রাখতেও সাহায্য করে। এ গাছের যত্ন নেওয়া অতি সহজ। সামান্য পরিচর্যাতেই মানিপ্ল্যান্ট তরতরিয়ে বেড়ে ওঠে। অনেকের ধারণা, ঘরে এ গাছ রাখলে গৃহস্থের আর্থিক উন্নতি অবধারিত।
মানি প্ল্যান্টের পরিচয়
লতানে চিরসবুজ গাছ মানি প্ল্যান্ট, এর বৈজ্ঞানিক নাম Epipremnum aureum। এই গাছ বহুবর্ষজীবী। মানি প্ল্যান্ট গাছের আদিনিবাস পলিনেশিয়া। এখন অবশ্য এ গাছ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। মানিপ্ল্যান্টের বেশ কয়েকটা ভ্যারাইটি আছে।
সপুষ্পক উদ্ভিদ হলেও সাধারণত মানি প্ল্যান্ট গাছে ফুল ফোটে না। আসলে একটা বিশেষ জিন (gibberellin biosynthetic gene) অকেজো থাকায় এই গাছে খুব কমই ফুল ফুটতে দেখা যায়। তবে হরমোনের সাহায্যে মানিপ্ল্যান্ট গাছে ফুল ফোটানো সম্ভব। |
মানি প্ল্যান্টের প্রধান আকর্ষণ এর বাহারি পাতা। সবুজ পাতাগুলোর ওপর হলুদ, হালকা সবুজ বা সাদা রঙের বিচিত্র ছোপ থাকে। বাগানে লাগালে মানিপ্ল্যান্ট গাছ ৬০-৬৫ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। টবে লাগালে এ গাছ সাধারণত ৫-৬ ফুটের বেশি বাড়তে পারে না।
মানি প্ল্যান্ট গাছের উপকারিতা
ঘর সাজানোর গাছ হিসেবে মানি প্ল্যান্ট দারুণ জনপ্রিয়। সুদৃশ্য একগুচ্ছ পাতা নিয়ে এ গাছ গৃহশোভা বাড়ায়। অনেকে আবার বিশ্বাস করেন, ঘরে মানিপ্ল্যান্ট রাখলে গৃহস্থের সৌভাগ্য আসে, আর্থিক উন্নতি ঘটে। তবে এই বিশ্বাসের পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
মানি প্ল্যান্ট গাছের গুণ কেবল এটুকুই নয়। অনেকে অ্যাকোয়ারিয়ামের ওপর মানি প্ল্যান্ট গাছ রেখে জলের মধ্যে এর শিকড় বাড়তে দেন। শিকড়গুলো নাইট্রেট লবণ শোষণ করে অ্যাকোয়ারিয়ামের জল শোধন করে। তাছাড়া, মানিপ্ল্যান্ট এক চমৎকার বায়ুশোধনকারি ইনডোর গাছ। [আরো পড়ুন ➤ ইনডোর প্ল্যান্ট: বাহারি ঘরোয়া গাছে ঘরের দূষণ কমান] এ গাছ বাতাস থেকে অনেক বিষাক্ত যৌগ দূর করে। যেমন,
- ফরম্যালডিহাইড,
- বেনজিন,
- জাইলিন,
- টলুইন,
- ট্রাইক্লোরোইথেন, ইত্যাদি।
মানি প্ল্যান্টের যত্ন
মানি প্ল্যান্ট গাছের জন্য বেশি যত্ন লাগে না। এ গাছের সহ্যশক্তি অসাধারণ। বিভিন্ন ধরণের পরিবেশে মানি প্ল্যান্ট অনায়াসে মানিয়ে নিতে পারে।
➤ দোয়াঁশ বা বেলে-দোয়াঁশ মাটি মানি প্ল্যান্টের উপযুক্ত। টবে এ গাছ লাগালে মাটি তৈরির সময় অল্প জৈব সার মেশানো যেতে পারে। এ গাছের জন্য কোনোরকম রাসায়নিক সার লাগে না। তবে, বছরে অন্তত একবার মানিপ্ল্যান্টের টবের মাটি বদলে দেওয়া উচিত।
➤ মানি প্ল্যান্ট গাছে নিয়মিত জল দিতে হয়। তবে, রুটিন বেঁধে জল দেওয়ার থেকে মাটি দেখে গাছে জল দেওয়া ভালো। টবের মানি প্ল্যান্ট অতিরিক্ত জল ভালোবাসে না। অতিরিক্ত জল দিলে এর পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়তে পারে বা গোড়া পচে যেতে পারে। তাই টবের মানিপ্ল্যান্ট গাছে সর্বদা পরিমিত জল দিতে হবে।
➤ ট্যাপের জলে ক্লোরিন বা ফ্লুওরিন থাকলে সেই জল মানি প্ল্যান্ট গাছে দেওয়া চলবে না। দিলে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাবে। যদি একান্তই এধরনের ট্যাপের জল গাছে দিতে হয়, তবে তা বালতিতে অন্তত একদিন রেখে ওপরের দিক থেকে নিয়ে দিতে হবে।
➤ মানি প্ল্যান্ট গাছের জন্য আলো একটা জরুরি বিষয়। বেশি সময় প্রখর রোদে রাখলে এ গাছের পাতা শুকিয়ে যেতে পারে। আবার একেবারে রোদহীন জায়গায় গাছকে রাখলে পাতায় বর্ণবৈচিত্র তৈরি হবে না। সারাদিন পরোক্ষ সূর্যের আলো ও সকালে কিছুক্ষণ নরম রোদ খাওয়াতে পারলে মানিপ্ল্যান্ট গাছের পক্ষে সব দিক থেকে উত্তম।
➤ মানি প্ল্যান্ট গাছে মাঝে মাঝে স্প্রেয়ার দিয়ে জল ছেটাতে পারলে ভালো হয়। এতে গাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকে ও পাতাগুলো ঝলমলে দেখায়।
➤ মানি প্ল্যান্ট গাছের আকার-আকৃতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে দরকার মতো প্রুনিং করা যেতে পারে। তাছাড়া গাছের যে পাতাগুলো হলুদ হয়ে যাবে, সেগুলো নিয়মিত কেটে ফেলতে হবে।
➤ সঠিক পরিবেশে রাখলে মানিপ্ল্যান্ট গাছে রোগপোকার আক্রমণ খুব কম হয়। ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগের ক্ষেত্রে রাসায়নিক বিষ প্রয়োগের বদলে জৈব পদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত। রোগ একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে আক্রান্ত অংশ কেটে বাদ দিয়ে গাছকে বাঁচানোর চেষ্টা করা যায়।
➤ মানি প্ল্যান্টে মিলি বাগ বা অ্যাফিড জাতীয় পোকামাকড়ের আক্রমণ ঘটলে আক্রান্ত অংশটা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলা যেতে পারে। নিম তেল প্রয়োগেও সুফল পাওয়া যাবে। আরেকটা ভালো পদ্ধতি হলো রাবিং অ্যালকোহল (আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল)-এ তুলো ভিজিয়ে আক্রান্ত অংশটা মুছে পরিষ্কার করে ফেলা। রাবিং অ্যালকোহল ওষুধের দোকানে কিনতে পাওয়া যায়।
➤ মানি প্ল্যান্ট গাছের চারা তৈরি করা কঠিন নয়। গাছের ডাল কেটে গ্রন্থি-সহ দেড়/দু ইঞ্চি নরম মাটিতে পুঁতে দিলে দিন পনেরোর মধ্যে শিকড় বেরিয়ে নতুন গাছ তৈরি হয়ে যায়।
● মানি প্ল্যান্ট গাছ হাইড্রোপোনিক কালচার বা জলীয় দ্রবণেও ভালো বাড়ে। অনেকে কাচের পাত্রে জল রেখে তাতে মানি প্ল্যান্ট রাখেন। এইভাবে মানি প্ল্যান্ট গাছ রাখলে, সপ্তাহে অন্তত একবার পাত্রের জল বদলে দিতে হবে। তাছাড়া আধার পাত্রে যাতে জলের মাত্রা কমে না যায়, সেজন্য নিয়মিত অল্প অল্প জল দিতে হবে।
একটা ছোট্টো সাবধানতা
ঘরে মানি প্ল্যান্ট গাছ রাখলে একটা বিষয়ে একটু সাবধান থাকা দরকার। এই গাছের কান্ডে ও পাতায় ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকে। ভুল করে এগুলো খেয়ে ফেললে মুখে ও গলায় অস্বস্তি হতে পারে। তাছাড়া মানি প্ল্যান্টের ডালপাতা অহেতুক বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করা ঠিক না। বাড়িতে ছোটো বাচ্চা ও পোষ্য প্রাণী থাকলে মানি প্ল্যান্টকে তাদের নাগালের বাইরে একটু বেশি উচ্চতায় রাখা ভালো।
চমৎকার ইনডোর গাছ মানি প্ল্যান্ট
মানি প্ল্যান্ট গাছ সম্পর্কে একটা কথা চালু আছে। বেশি যত্ন নিলে এ গাছ বাঁচে না। এটা হয়তো মজা করেই বলা হয়। তবে, এতো কম যত্নে এমন সুন্দর একটা গাছ যে ঘরে রাখা যায়, সেটা সত্যিই আশ্চর্যের বিষয়। পৃথিবীর ব্যস্ততম লোকটাও বোধহয় মানিপ্ল্যান্টের সাহায্যে নিজের ঘরকে সহজেই সাজিয়ে নিতে পারবেন। [ছবিগুলি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]