ক্ষতিকর থার্মোকলের থালা-বাটি-প্লেট আর নয়

থার্মোকলের পাত্র স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর

ক্ষতিকারক থার্মোকল হইতে সাবাধান! এমনিতে তো আমরা দেখি বস্তুটা ধবধবে সাদা। এর তৈরি নানারকম পাত্র বিয়েবাড়ি থেকে হোটেল-রেস্টুরেন্ট, সব জায়গায় আমরা ব্যবহারও করি। এগুলোর নাকি অনেক সুবিধা। দামে সস্তা, বাসন ধোয়ার ঝামেলা নেই, ব্যবহার করে ফেলে দিলেই হলো। এত্তো এর ‘গুণ’! কিন্তু থার্মোকলের থালা-বাটি-প্লেট যে স্বাস্থ্যের পক্ষে কতোটা ক্ষতিকর সেটা আমরা ভাবি না। ফলে অজান্তেই ঘটে যায় দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ক্ষতি। এছাড়া পরিবেশের ক্ষতি তো হয়ই।

থার্মোকলের চরিত্র
থার্মোকল আদতে প্লাস্টিক জাতীয় বস্তু। এর আরেক নাম স্টাইরোফোম। পেট্রোলিয়াম জাত পলিস্টাইরিন নামক পদার্থ থেকে বিশেষ রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় থার্মোকল। এর রঙ দুধের মতো সাদা। কিন্তু এই সাদার আড়ালেই লুকিয়ে আছে বেশ কিছু ক্ষতিকর দিক।

থার্মোকলের পাত্র একেবারেই নিরাপদ নয়

কেনো থার্মোকলের প্লেটে খাবার খাওয়া উচিত নয় তার একটা নয়, অনেকগুলো কারণ আছে। প্রথমেই একটা সহজ কথা বুঝতে হবে। থার্মোকল থেকে তৈরি করা পাত্রগুলো দেখতে শ্বেতশুভ্র হলে কি হবে, এগুলো কিন্তু পরিষ্কার নয়। এই পাত্রগুলোকে জীবাণুমুক্ত বলে ধরে নেওয়া যায়না। তাছাড়া থার্মোকলের থালাবাটির একটা বিপদ হলো এগুলোতে খাবার রাখলে, খাবারে বেশ কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মিশে যায়। বিশেষ করে, এগুলোতে গরম খাবার রাখলে বা খাবার রেখে এগুলোকে গরম করলে এই ব্যাপারটা ঘটবেই।

স্বাস্থ্যঝুঁকি

আমরা যদি নিয়মিত থার্মোকলের পাত্র থেকে খাবার খাই, তাহলে একসময় আমাদের নানারকম রোগ হতে পারে। ক্ষতিকর রাসায়নিকের প্রভাবে আমাদের শরীরে হরমোনের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হতে পারে। এর ফলে এমনকি ক্যানসার হওয়ার সম্ভবনাও বেড়ে যায়। ইতিমধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসার বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র থার্মোকলের মূল উৎস স্টাইরিনকে ‘খুব সম্ভবত ক্যানসার সৃষ্টিকারী’ (probably carcinogenic) হিসেবে ঘোষণা করেছে [Chemical Watch]। থার্মোকলের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আমাদের—

  • কিডনি,
  • লিভার,
  • অন্তক্ষরা গ্রন্থিসমূহ ও
  • স্নায়ুতন্ত্র।

পরিবেশের প্রশ্ন

পরিবেশের পক্ষেও থার্মোকল দারুণ ক্ষতিকর। এটা বায়োডিগ্রেডেবল নয়, অর্থাৎ, সহজে মাটিতে মিশে যায় না। বস্তুত, থার্মোকল পরিবেশে বিলীন হতে শত শত বছর লেগে যেতে পারে। এর রিসাইক্লিং সম্ভব হলেও তা এতোটাই খরচসাপেক্ষ যে বাস্তবে রিসাইক্লিং একেবারেই হয়না। একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া থার্মোকলের থালাবাটি আমাদের চারপাশে প্লাস্টিক আবর্জনার সঞ্চয় যে কী পরিমানে বাড়িয়ে তুলতে পারে তা সহজেই ধারণা করা যায়।

সত্যি কথা বলতে কি, ফেলে দেওয়া থার্মোকল বর্তমানে একটা বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলো যেখানে সেখানে ছড়াচ্ছে। নালা নর্দমা আটকে দিচ্ছে। জলাশয়ে পড়ে জল দূষিত হচ্ছে। স্থল ও জলের প্রাণীরা ভুল করে থার্মোকলের প্লেট খেয়ে ফেলে মারা যাচ্ছে।

থার্মোকলের আবর্জনা পোড়ানো অত্যন্ত বিপজ্জনক। থার্মোকল পোড়ালে অন্তত ৯০ রকম ক্ষতিকর গ্যাস তৈরি হয়ে বাতাসে মিশে যায়। পোড়ানোর পরে থেকে যায় এক ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত বিষাক্ত অবশেষ।

থার্মোকলের বিকল্প আছে হাতের কাছেই

আজকাল থার্মোকলের পাত্রগুলোর বদলি হিসেবে আখের ছিবড়ে, ভুট্টা গাছ, সুপুরি পাতা ইত্যাদি জৈব বস্তু থেকে নানা মডেলের থালাবাটি তৈরি হচ্ছে। এগুলো বাজারে পাওয়াও যাচ্ছে। পাশাপাশি আমাদের ঐতিহ্যগত শালপাতা, কলাপাতা, পদ্মপাতা এসব তো আছেই। এগুলো খুব ভালোভাবে থার্মোকলের থালাবাটির জায়গায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

কলাপাতায় স্বাস্থ্যকর আহার

শেষের কথা

ইদানিং থার্মোকলের তৈরি খাবারের পাত্র বন্ধ করার কথা মাঝেমধ্যে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কেবল সাধারণ মানুষকে এগুলোর ব্যবহার বন্ধ করতে বলে লাভ নেই। ক্ষতিকর এই পণ্যগুলোর উৎপাদন ও আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করলে তবেই হয়তো কার্যকর ভাবে থার্মোকল জনিত বিপদের মোকাবিলা করা যাবে। [ছবিগুলি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]