ইনডোর প্ল্যান্টের উপকারিতা: গাছের গুণে বায়ু শোধন

ইনডোর প্ল্যান্ট বা ঘরোয়া গাছ, এদের উপকারিতা অনেক।

বায়ু দূষণ বলতেই অনেকের মনে পড়ে বাড়ির বাইরে গাড়ির ধোঁয়া, চিমনির ধোঁয়া কিংবা আবর্জনা পোড়ানোর ধোঁয়ার কথা। ধারণাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। আধুনিক যুগে বায়ুর দূষণ কেবল বাড়ির বাইরে নয়, অন্দরেও ঘটে চলেছে। ঘরের ভেতরে এ ধরনের ক্ষতিকর দূষণ থেকে বাঁচতে ইনডোর প্ল্যান্ট বা ঘরোয়া গাছ আমাদের বন্ধু হতে পারে। এই বাহারি গাছগুলোর উপকারিতা অনেক। এগুলো যে কেবল ঘর সাজানোর কাজে লাগে তাই নয়, ঘরের ভেতরের বাতাসকে শুদ্ধ রাখতেও ইনডোর গাছ দারুণ কাজে দেয়।

ঘরের ভেতর বায়ুর দূষণ

ইনডোর গাছের উপকারিতা নিয়ে কিছু বলার আগে ঘরোয়া বায়ু দূষণ ব্যাপারটা খুব সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করে নিই। এ ধরনের বায়ু দূষণ নানা কারণেই ঘটে থাকে। একে তো বাইরের দূষিত বায়ু আমাদের বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়ে। তার ওপর আধুনিক জীবনের নানা উপকরণ নানান উদ্বায়ী জৈব যৌগ (Volatile Organic Compound) ছড়িয়ে ঘরের ভেতরের বাতাসকে আরো দূষিত করে তোলে। এদিক থেকে দেখলে, শৌখিন পারফিউম, বডি স্প্রে, দেওয়ালের পেইন্ট, প্লাস্টিকের জিনিসপত্র, আসবাবপত্রের বার্নিশ, অ্যাডহেসিভ, কেমিকাল ক্নিনার, কীটনাশক, মশা তাড়ানোর ধূপ কিংবা লিকুইড রেপেল্যান্ট, সিগারেটের ধোঁয়া, এগুলো সবই ঘরোয়া বায়ু দূষণের উৎস।

ঘরে বায়ু চলাচলের সুব্যবস্থা না থাকলে আভ্যন্তরীণ দূষণের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। এ ধরণের দূষিত বায়ুতে দীর্ঘদিন বাস করলে যে কারোর দেখা দিতে পারে নানান জটিল রোগ, যেমন, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, ফুসফুসের বিভিন্ন রোগ, হার্ট স্নায়ুতন্ত্র ও কিডনির রোগ। এমনকি হতে পারে ক্যানসারও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৪০,০০,০০০ মানুষ ঘরোয়া বায়ু দূষণ থেকে সৃষ্ট নানা রোগে অকালে মারা যান [WHO]। ঘরের বায়ু দূষণ তাই রাস্তার বায়ু দূষণের চেয়ে মোটেই কম বিপজ্জনক নয়। ঘরের ভেতরের এই ক্ষতিকর দূষণ কমাতে আমাদের সাহায্য করতে পারে ইনডোর প্ল্যান্ট, অর্থাৎ, বাহারি ঘরোয়া গাছ।

ইনডোর প্ল্যান্ট বা ঘরোয়া গাছের বিশেষ উপকারিতা ঘরের বায়ু শুদ্ধ রাখা।

কয়েক রকম ইনডোর প্ল্যান্ট

দূষণ রোধে ইনডোর প্ল্যান্টের উপকারিতা

ঘরের পরিবেশকে শুদ্ধ রাখতে চাইলে ইনডোর প্ল্যান্টের চেয়ে পরম বন্ধু আর কেউ নেই। এ ব্যাপারে এই বাহারি গাছগুলোর উপকারিতা প্রশ্নাতীত। আসলে, ইনডোর গাছগুলো কেবল কার্বন ডাইঅক্সাইড শুষে নিয়ে অক্সিজেন দেয় না, এগুলো ঘরের বাতাসে জমে ওঠা নানান বিষাক্ত জৈব যৌগও শোষণ করে নেয়, যেমন,—

  • ফর্ম্যালডিহাইড,
  • বেনজিন,
  • জাইলিন,
  • টলুইন,
  • অ্যাসিটোন, ইত্যাদি।

ইনডোর প্ল্যন্ট: নাসার স্বীকৃতি
1989 সালে NASA ইনডোর প্ল্যান্টের ওপর একটি অধ্যয়ন চালিয়েছিলো। এই অধ্যয়নে ঘরোয়া বায়ু দূষণ প্রতিকারে এ ধরনের বাহারি গাছের উপকারিতা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। পরে আরো জানা যায়, ঘরে ইনডোর প্ল্যান্ট রাখলে, গাছ ছাড়াও টবের মাটিতে বসবাসকারী অণুজীবরাও বায়ু শোধনে সাহায্য করে।

সৌন্দর্যায়নে ইনডোর প্ল্যান্ট

দূষণ কমানোর পাশাপাশি ইনডোর প্ল্যান্টগুলো ঘর সাজানোর কাজেও অতুলনীয়। ঘরে যতোই দামি পেইন্ট বা মহার্ঘ আসবাব থাক, বাহারি গাছ দিয়ে সাজানো ঘরের যে শোভা, তার কোনো তুলনাই হয় না।

বাহারি গাছ গৃহসজ্জার উপকরণ

বাহারি গাছে গৃহসজ্জা

শহরের পরিবেশে ইনডোর প্ল্যান্টের বিশেষ গুরুত্ব

শহর ও শহরতলিতে জমির দাম বেশি হওয়ায় অনেক পরিবারকে কম জায়গার মধ্যে বাড়ি বানাতে হয়। অনেক পরিবার আবার ফ্ল্যাটে থাকে। গাছ ভালোবাসলেও অনেকেরই গাছ লাগানোর মতো জমি থাকে না। তবে ঘরোয়া পরিসরে কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট যে কেউ রাখতে পারেন। বলা ভালো, অন্তত কয়েকটা ইনডোর প্ল্যান্ট সকলেরই ঘরে রাখা উচিত। এইসব ঘরোয়া গাছ অপেক্ষাকৃত কম আলো ও কম জলেও দিব্বি বেঁচে থাকতে পারে। এগুলোর জন্য বিরাট কিছু যত্নের দরকার হয় না। সাধারণত ইনডোর প্ল্যান্টগুলো দামেও বেশ সস্তা।

বাহারি ইনডোর গাছ দিয়ে ঘর সাজান

আমাদের দেশের জলবায়ুতে স্নেক প্ল্যান্ট, মানি প্ল্যান্ট, স্পাইডার প্ল্যান্ট, এলোভেরা, ফার্ন, এগ্লোনিমা, ক্রোটন, আরেকা পামের মতো সুদৃশ্য ইনডোর গাছ ঘরোয়া পরিবেশে সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকে। তাহলে আর দেরি কেনো, হরেক রকম ইনডোর গাছ দিয়ে আপনার ঘরগুলোকে সাজিয়ে ফেলুন। এরপর আপনার জন্য দূষণমুক্ত স্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্বটা এই উপকারি গাছ বন্ধুরা নিজেরাই ‘কাঁধে’ (মানে, পাতায়) তুলে নেবে। এ ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। [ছবিগুলি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]