বৃক্ষের প্রাচীনতায় মুগ্ধ হয়ে কবি তাকে আদি প্রাণ বলে সম্মান দিয়েছিলেন। সত্যিসত্যিই পৃথিবীতে এমন কিছু অতি প্রাচীন বৃক্ষ আছে যাদের জীবনীশক্তি বিস্ময়কর। পৃথিবীর এই প্রাচীনতম বৃক্ষ সমূহের দীর্ঘ জীবনের পেছনে কী যে রহস্য লুকিয়ে আছে তা মানুষ আজও পুরোপুরি জানতে পারে নি। এমনই ৮টি অসাধারণ বৃক্ষের পরিচয় এখানে তুলে ধরলাম।
ভাউভসের জলপাই
খরা, দাবানল ও রোগবালাই প্রতিরোধে সক্ষম বলে জলপাই গাছেদের বিশেষ সুনাম আছে। তবে গ্রীসের ক্রীট দ্বীপের এই সুপ্রাচীন জলপাই বৃক্ষটির সেই সক্ষমতা নিঃসন্দেহে অনেকটাই বেশি। বয়স একেবারে সঠিকভাবে জানা না গেলেও, এটি অন্তত ৩০০০ বছরের বেশি পুরোনো। এখনো এই বৃক্ষটিতে প্রচুর জলপাই হয়। এবং সেই জলপাই রীতিমতো চড়া দামে বিক্রিও হয়!
দি সেনেটর
বিশ্বের প্রাচীনতম বৃক্ষ গুলির মধ্যে অন্যতম এই সুউচ্চ সাইপ্রেস গাছটি আমেরিকার ফ্লোরিডায় অবস্থিত। এটির বয়স প্রায় ৩৫০০ বছর। গাছটির বাস ঝড় প্রবণ এলাকায়। ঝড়ে এটির ক্ষয়ক্ষতিও কম হয় না। যেমন, ১৯২৫ সালে এক শক্তিশালী ঝড়ে ডালপালা ভেঙে এর উচ্চতাই ৪০ ফুট কমে গেছিলো। আবার ২০১২ সালের এক দাবানলেও গাছটির দারুণ ক্ষতি হয়। তবে এতোসব বিপদের মোকাবিলা করে এটি আজও দিব্যি বেঁচে আছে! স্থানীয় রেড ইন্ডিয়ান আদিবাসীরা এই প্রাচীন বৃক্ষটিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করেন।
একশ ঘোড়ার চেস্টনাট
এটি বিশ্বের প্রাচীনতম তথা বিশালতম চেস্টনাট বৃক্ষ, বয়স ৪০০০ বছরের কাছাকাছি। এটির খাসতালুক ইতালির সিসিলি দ্বীপের এটনা পর্বত। শোনা যায়, বহু বছর আগে একবার একশ জন ঘোড়সওয়ার এই বৃক্ষের নীচে আশ্রয় নিয়ে প্রলয়ংকর ঝড়বৃষ্টি থেকে প্রাণে বেঁচেছিলো। সেই থেকেই এর নাম হয়েছে একশ ঘোড়ার চেস্টনাট। এটনা পর্বত পৃথিবীর সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে একটা। এর জ্বালামুখ থেকে একশ ঘোড়ার চেস্টনাটের দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার!
গ্র্যান্ড অ্যাবিউএলো
এটি দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালার একটি আলের্সে বৃক্ষ। এই সুউচ্চ বৃক্ষগুলি আন্দিজ পার্বত্য অঞ্চলের স্থানীয় উদ্ভিদ। এই জাতীয় অনেক সুপ্রাচীন বৃক্ষকে ১৯ ও ২০-এর দশকে কেটে ফেলা হয়েছে। তার পরেও বেশ কিছু আলের্সে বৃক্ষ এখনো টিকে আছে! এদের মধ্যে প্রাচীনতম হলো গ্র্যান্ড অ্যাবিউএলো। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের হিসেবে এই বৃক্ষটির বয়স ৩৬৪৬ বছর।
ল্যানজারনিউ ইউ
এই প্রাচীনতম ইউ বৃক্ষ যুক্তরাজ্যের উত্তর ওয়েলসে ল্যানজারনিউ গ্রামের একটি ছোট্টো চার্চে অবস্থিত। বহুকাল পূর্বে ব্রোঞ্জ যুগে কেউ এই গাছটি লাগিয়েছিলো। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন এই মহীরুহের বয়স প্রায় ৪০০০ বছর। মজা হচ্ছে, এই গাছটি আজও বেড়ে চলেছে!
জেইমন সুজি
এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম ক্রিপটোমেরিয়া বৃক্ষ, এর অবস্থান জাপানের ইয়াকুশিমা দ্বীপে। অনেক মনে করেন, এই গাছটির বয়স প্রায় ৫০০০ বছর। ইয়াকুশিমা দ্বীপ ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পাওয়ার অন্যতম কারণ এই সুপ্রাচীন ক্রিপটোমেরিয়া বৃক্ষটির উপস্থিতি।
জরাথ্রুষ্টীয় সাইপ্রেস
এই প্রাচীন সাইপ্রেস মহীরুহটি ইরানের ইয়াজ্দ প্রদেশের আবার্কাহ্ শহরে অবস্থিত। এর আরেক নাম সার্ভ-এ-আবার্কাহ্। প্রাচীন ইরানের মনীষী জরাথ্রুষ্টের সময়ও এই গাছটি জীবিত ছিলো! গাছটির বয়স ৪০০০ থেকে ৫০০০ বছরের মধ্যে হতে পারে বলে অনুমান করা হয়। ইরানে গাছটি অত্যন্ত সম্মানিত। একে সেদেশে জীবন ও সৌন্দর্যের প্রতীক রূপে গণ্য করা হয়।
মেথুসেলাহ্
এটি একটি অতি প্রাচীন ব্রিসলকোন পাইন। এর অবস্থান পূর্ব ক্যালিফোর্নিয়ার হোয়াইট মাউন্টেন্স অঞ্চলের ইনিও বনভূমিতে। কোর স্যাম্পেল বিশ্লেষণ করে জানা গেছে এই অসামান্য বৃক্ষটির বয়স এখন ৪৮৫১ বছর। এটিকেই অনেকে পৃথিবীর প্রাচীনতম বৃক্ষ হিসেবে গণ্য করেন। ক্যালিফোর্নিয়ার শুষ্ক জলবায়ু যুক্ত, অনুর্বর পার্বত্য অঞ্চলে এই পাইন গাছটি কীভাবে এতোকাল বেঁচে আছে সেটা এক অবাককরা ব্যাপার। নিরাপত্তার স্বার্থে গাছটির নির্দিষ্ট অবস্থান আমেরিকার বনবিভাগ গোপন রেখেছে! [নিচের ছবিটি একটি প্রাচীন ব্রিসলকোন পাইনের।]
রয়েছে আরো অনেক প্রাচীন বৃক্ষ
ওপরে বর্ণিত মহান মহীরুহগুলির থেকেও প্রাচীন কোনো বৃক্ষ যে পৃথিবীতে নেই সেকথা অবশ্য নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ, প্রাচীনতম বৃক্ষ সমূহের অনেকগুলির বয়স এখনো অনুমান করা সম্ভব হয় নি। সাম্প্রতিক কালে এমন প্রাচীন বৃক্ষের খোঁজ পাওয়ার কথা শোনাও যাচ্ছে। যেমন, ক্যালিফোর্নিয়াতেই আরেকটি ব্রিসলকোন পাইন গাছের কথা শোনা যাচ্ছে, যার বয়স ৫০০০ বছরেরও বেশি বলে অনেকে মনে করছেন।
এই প্রাচীন বৃক্ষগুলি কীভাবে এতো দীর্ঘ সময় ধরে সফল ভাবে পৃথিবীতে টিকে আছে, সেটা ভেবেই বিস্মিত হতে হয়। [ছবিগুলি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।]








