
পৃথিবীর প্রায় সবকটা বড়ো শহরই আজকাল বায়ু দূষণে জেরবার। এই শহরগুলোতে যে বায়ু দূষণ ঘটে তার একটা চরম রূপ হলো স্মগ। এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর এক দূষণ। আমেরিকার মতো শিল্পোন্নত দেশে স্মগ জনিত নানা রোগে প্রতি বছর প্রায় ২৪০০০ মানুষের মৃত্যু ঘটে। ভারত বা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া মুশকিল। তবে অনুমান করা যায়, এই দেশগুলোতেও স্মগ জনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুর সংখ্যা খুব কম নয়।
স্মগ ব্যাপারটা কী?
সহজ ভাষায় বলি। স্মগ হলো স্মোক, অর্থাৎ, ধোঁয়া, এবং ফগ, অর্থাৎ, কুয়াশার এক মিশেল। বাংলায় একে ধোঁয়াশা বলা যেতে পারে। অনেক বড়ো বড়ো শহরের বাতাসে সময় বিশেষে এই স্মগ বস্তুটাকে জমে উঠতে দেখা যায়। সাধারণত কলকারখানা ও অন্যান্য উৎস থেকে বেরোনো কয়লা-পোড়া ধোঁয়া এবং যানবাহনের ধোঁয়া বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্পের সাথে মিলেমিশে স্মগের ঘন আস্তরণ তৈরি করে।
স্মগের উপাদান হলো কার্বন কণা, ভারি ধাতুর কণা, অন্যান্য সূক্ষ্ম ধূলিকণা, কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস, নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, নানা রকম বিষাক্ত উদ্বায়ী জৈব যৌগ, হাইড্রোকার্বন ও জলীয় বাষ্প। বিশেষ পরিস্থিতিতে এগুলো আবার নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়া করে তৈরি করে অত্যন্ত ক্ষতিকর নানারকম রাসায়নিক পদার্থ।

শীতকালীন স্মগ
সাধারণ ভাবে বড়ো শহরগুলোতে শীতকালেই বায়ু দূষণ বেশি থাকে। এসময় অনেক শহরে স্মগ বেশি দেখা যায়। এর কারণ হলো শীতকালে বাতাসের গতি অনেক কম থাকায় দূষণকারী পদার্থগুলো শহরে বুকে জমে ওঠার সুযোগ বেশি পায়। তাছাড়া শীতকালে নানা ক্ষেত্রে জ্বালানি হিসেবে কয়লা পোড়ানোর পরিমাণও বেশ খানিকটা বেড়ে যায়।
গ্রীষ্মকালীন স্মগ
গ্রীষ্মকালে যদি স্মগ জমে তা হয় শীতেকালীন স্মগের থেকেও ক্ষতিকর। গ্রীষ্মের উষ্ণ আবহাওয়ায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে স্মগের মধ্যে থাকা প্রাথমিক দূষণকারী পদার্থগুলো নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়া করে তৈরি করে নানান অতিসক্রিয় রাসায়নিক পদার্থ। এই স্মগ তখন আর সাধারণ স্মগ থাকে না, হয়ে যায় ফটোকেমিকাল স্মগ (photochemical smog)। ফটোকেমিকাল স্মগে থাকা কয়েকটা বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থের উদাহরণ,
- ভূসংলগ্ন ওজোন,
- পারক্সিঅ্যাসাইল নাইট্রেট,
- ফরম্যালডিহাইড,
- নাইট্রিক অ্যাসিড, ইত্যাদি।
স্মগের বিপদ
মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে স্মগ, বিশেষ করে ফটোকেমিকাল স্মগ মারাত্মক ক্ষতিকর। স্মগের সংস্পর্শে এলে যে কারো তাৎক্ষণিক ভাবে হতে পারে শ্বাসের সমস্যা, চোখ নাক গলার জ্বলুনি, কাশি, বমিভাব ও অন্যান্য জটিলতা। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় শিশু, প্রবীণ নাগরিক ও অসুস্থ ব্যক্তিরা।
গর্ভবতী নারীরা স্মগের মধ্যে বেশি বেশি সময় কাটালে তাদের সন্তানদের মধ্যে দেখা দিতে পারে নানা অস্বাভাবিকতা। দীর্ঘদিন স্মগের মধ্যে বেশি বেশি সময় কাটালে ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা ও শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য অসুখ দেখা দিতে পারে। রোগপ্রতিরোধ শক্তি হয়ে পড়তে পারে কমজোর। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে স্নায়ুতন্ত্রও। এমন কি স্মগগ্রস্ত বড়ো শহরগুলোর অনেক অকাল মৃত্যুর জন্যও স্মগকে দায়ি করছেন বিশেষজ্ঞরা। [আরো পড়ুন: বায়ু দূষণের কুফল সম্পর্কে এখনই সচেতন হোন]
সাবধান কলকাতা!
দিল্লি ও উত্তর ভারতের অনেক শহর ইতিমধ্যেই স্মগের জন্য দুর্নাম অর্জন করেছে। কলকাতায় এখনো পর্যন্ত বড়ো আকারে স্মগ দেখা দেবার খবর পাওয়া যায়নি। তবে সামগ্রিক ভাবে বায়ু দূষণে দিল্লির থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই কলকাতা। এখনই সাবধান হয়ে বায়ু দূষণ না কমালে অদূর ভবিষ্যতে এখানেও স্মগ দূষণ বেড়ে যেতে পারে, এমনটা ধরে নিলে খুব ভুল হবে বলে মনে হয় না। [ছবিগুলি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]