
প্যাচপ্যাচে গরমের দিনে কোল্ড ড্রিংকস-এ চুমুক দিয়ে মনে হয় নাকি “প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে মোরে আরো আরো আরো দাও”? আপনি যদি কোল্ড ড্রিংকসের ভক্ত হন, তবে সাবধান। এই বস্তুটা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর বলে ডাক্তারবাবু ও পুষ্টিবিশারদরা সমস্বরে রায় দিচ্ছেন। বেশি কোল্ড ড্রিংকস খেলে কী ক্ষতি হয় তা নিয়ে সোসাল মিডিয়ায় ইদানিং লেখালিখিও কম হচ্ছে না। অতএব এ ব্যাপারে আমাদের এখন সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
কোল্ড ড্রিংকস খেলে কী কী ক্ষতি হয়
কোল্ড ড্রিংকসের নানান ক্ষতিকর প্রভাব বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত। বিশেষ করে গরম থেকে এসেই ঢকঢক করে ঠান্ডা কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া তো একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সাধারণত ফ্রিজ থেকে বের করা কোল্ড ড্রিংকসের তাপমাত্রা থাকে ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি। এই তাপমাত্রার ঠান্ডা পানীয় খেলে আসলে গলা, খাদ্যনালী ও পাকস্থলীর ওপর অত্যাচার করা হয়। এর ফলে গলায় ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ হওয়ার সম্ভবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। [আরো পড়ুন: গরমের মহৌষধ মাটির কলসির ঠান্ডা জল] এছাড়াও গোটা শরীরের ওপর কোল্ড ড্রিংকসের প্রচুর ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায়।
➤ বাজারে যতো রকম কোল্ড ড্রিংকস পাওয়া যায় তার কোনোটাতেই পুষ্টিমূল্য থাকে না। এই ঠান্ডা পানীয়গুলো খেলে আমাদের দেহে শারীরবৃত্তীয় কাজগুলো অবদমিত হয়। এগুলোর প্রভাবে ফ্যাট-পোড়ানো উৎসেচকগুলোর নিঃসরণও কমে যায়। এর পরিণতি মোটাপা। আর কে না জানে, মোটা হওয়া মানে গুচ্ছের রোগকে শরীরে আমন্ত্রণ জানানো।
➤ বেশিরভাগ কোল্ড ড্রিংকসের মধ্যে মিষ্টতা আনার জন্য নানারকম রাসায়নিক পদার্থ মেশানো থাকে। যেমন, অনেক কোল্ড ড্রিংকসে থাকে অ্যাসপারটেম (Aspartame) নামের কৃত্তিম মিষ্টি যা চিনির থেকেও ২০০ গুণ বেশি মিষ্টি। ক্ষতিকর এই যৌগগুলোর প্রভাবে লিভারের ক্ষয় ও কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও এগুলোর প্রভাবে দেখা দিতে পারে—
- মাইগ্রেন,
- দৃষ্টিশক্তির অস্বচ্ছতা,
- স্মৃতিভ্রংশ,
- বুক ধড়ফড়ানি,
- শ্বাসের সমস্যা,
- আবেগের বিশৃঙ্খলা, ও
- প্রজনন স্বাস্থ্যের হানি।
➤ সবরকম কোল্ড ড্রিংকসেই সংরক্ষণের সুবিধার জন্য নানারকম কেমিকাল প্রিজারভেটিভ মেশানো থাকে, যেমন, সোডিয়াম বেনজোয়েট (বা বেনজোয়িক অ্যাসিড)। এগুলো স্বাস্থ্যের পক্ষে দারুণ ক্ষতিকর। অনেক কার্বোনেটেড কোল্ড ড্রিংকসের রঙ ঠিক রাখতে সালফার ডাইঅক্সাইড মেশানো হয়, যেটা বিষাক্ত। এজাতীয় পানীয় বেশি খেলে বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন, গা ফুলে যাওয়া, বুকের ভেতর জমাট বাঁধা ভাব, চামড়ায় দাগ, শক, মূর্ছা যাওয়া, ইত্যাদি।
➤ কোল্ড ড্রিংকসকে দেখতে আকর্ষণীয় করার জন্য ব্যবহার করা হয় নানারকম কৃত্তিম রং। যেমন, ক্যারামেল, টারট্রাজাইন, সানসেট ইয়েলো, ইত্যাদি। এই রাসায়নিক রংগুলো আমাদের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। তাছাড়া কোল্ড ড্রিংকসের বোতল বা ক্যান থেকেও নানান ক্ষতিকর রাসায়নিক পানীয়তে মিশে যেতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত কোল্ড ড্রিংকস খেলে এইসব রাসায়নিক পদার্থের প্রভাবে ক্যানসার হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়।
বেশিরভাগ কোল্ড ড্রিংকসের pH মাত্রা থাকে ৩.২-এর কাছাকাছি। অর্থাৎ, এই পানীয়গুলো আম্লিক প্রকৃতির। এই কারণে দাঁত ও হাড়ের পক্ষে এগুলো অতি বিপজ্জনক। কোল্ড ড্রিংকসে ফসফোরিক অ্যাসিড থাকলে হাড়ের ক্ষয় ও কিডনির ক্ষতি অনিবার্য। আর সাইট্রিক অ্যাসিড থাকলে দাঁতের ক্ষয়। আম্লিক চরিত্রের হওয়ায় কোল্ড ড্রিংকস পাকস্থলী তথা পরিপাকতন্ত্রের ওপরেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এগুলো বেশি খেলে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। |
➤ অনেক কোল্ড ড্রিংকসে ক্যাফেইন থাকে। এজাতীয় পানীয় বেশি খেলে আসক্তি তৈরি হতে পারে। কোল্ড ড্রিংকসের মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত ক্যাফেইন শরীরে ঢুকলে বেশ কিছু ক্ষতিকর প্রভাব দেখতে পাওয়া যায়। যথা, চঞ্চলতা, স্নায়ুদুর্বলতা, উচ্চ রক্তচাপ, প্রজনন স্বাস্থ্যের হানি, উত্তেজনা, অনিদ্রা, ইত্যাদি।
➤ কিছু কিছু কোল্ড ড্রিংকসে অতিরিক্ত শর্করা থাকে। এগুলো বেশি খেলে ডায়াবেটিস হতে পারে। হার্ট ও লিভারের পক্ষেও এজাতীয় কোল্ড ড্রিংকস অত্যন্ত ক্ষতিকর।
শেষের কথা: কোল্ড ড্রিংকসের বিকল্প
কোল্ড ড্রিংকসের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে আমাদের প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়। গরম লাগলে গরমকে হারানোর জন্য অনেকরকম পদ্ধতি আছে। তার মধ্যে কিছু স্বাস্থ্যসম্মত ও কিছু অস্বাস্থ্যকর। স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতির মধ্যে পড়ে শশা, তরমুজ, আম, জাম ইত্যাদি রসালো ফল খাওয়া। ঈষৎ ঠান্ডা দইয়ের ঘোল, আমপোড়া শরবৎ, লেবুর শরবৎ, পুদিনার শরবৎ, ইত্যাদি খাওয়া। আর অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতির মধ্যে পড়ে এন্তার কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া। যথেচ্ছ আইসক্রিম খাওয়া। আমরা জীবন যাপনের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পথ বেছে নেবো না অস্বাস্থ্যকর পথ বেছে নেবো, সেটা কিন্তু আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে। [ছবিগুলি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]