
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের চেনা পৃথিবী কি বদলে যাচ্ছে? সাম্প্রতিক নানা লক্ষণ দেখে তো তেমনটাই মনে হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় বাড়ছে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, তাপপ্রবাহ বা শৈত্যপ্রবাহের মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনা। দেখা যাচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটা। এসবের সাথেই বাড়ছে বেশি আর্দ্রতা যুক্ত বিপজ্জনক গরম আবহাওয়ার প্রকোপ। সম্প্রতি গবেষকরা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রিপোর্ট বের করেছেন যেগুলো আমাদের ভাবিয়ে তোলার পক্ষে যথেষ্ট।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফল মরুভবন
সাহারা মরুভূমি বিশ্বের উষ্ণতম এলাকাগুলোর মধ্যে একটা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ৫০ বছরের মধ্যে স্থলভাগের এক বিরাট অংশ সাহারা মরুর মতো তপ্ত হয়ে উঠবে। সেই পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হবেন, বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ। বিজ্ঞানীরা আরো জানিয়েছেন, গত ৬০০০ বছরে পৃথিবীতে যতোটা জলবায়ু পরিবর্তন ঘটেছে তার চেয়েও বেশি পরিবর্তন ঘটতে চলেছে আগামী আধা শতকের মধ্যে। [The Guardian]
বেশি আর্দ্রতা যুক্ত গরমের বিপদ
গরম আবহাওয়া মোকাবিলার জন্য আমাদের শরীরের নিজস্ব কুলিং সিস্টেম আছে। যখনই বাতাসের তাপমাত্রা আদর্শ তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখনই আমাদের ত্বকের ওপর ঘাম বেরোয়। এই ঘাম বাষ্পীভূত হওয়ার সময় শরীর থেকে কিছুটা তাপ বের করে দেয়। এতে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা (৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বজায় থাকে।
গরম আবহাওয়ার মধ্যে বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকলে শরীর থেকে ঘাম বেরোনোর ব্যাপারটা ঠিকঠাক চলে। এধরনের শুকনো গরম তুলনায় কম কষ্টকর। কিন্তু গরমের মধ্যে আবার বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমান বেশি থাকলে ঘাম বেরোনোর প্রক্রিয়াটা ব্যাহত হয়। তখন শরীরের নিজস্ব কুলিং ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়ে। এই অবস্থা শুধু কষ্টকরই নয়, স্বাস্থ্যের পক্ষেও বিপজ্জনক। এর পরিণতিতে শরীরের ভেতরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। এ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি হতে পারে, দেখা দিতে পারে হিট স্ট্রোক সহ নানা জটিলতা। দীর্ঘ সময় এমন অবস্থায় থাকলে এ থেকে মানুষের মৃত্যু ঘটাও অসম্ভব নয়। |
জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্ব জুড়ে বাড়ছে বিপজ্জনক গরম আবহাওয়া
চলমান জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সম্প্রতি একদল গবেষক একটা তাৎপর্যপূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ১৯৭৯ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে পৃথিবীতে অধিক আর্দ্রতা যুক্ত বিপজ্জনক গরম আবহাওয়ার প্রকোপ প্রায় ২গুণ বেড়ে গেছে। এ জাতীয় চরম-গরমের ঘটনা শুধু যে সংখ্যায় ও তীব্রতায় বেড়েছে তাই নয়, এতে প্রভাবিত এলাকার আয়তনও অনেকটা বেড়ে গেছে।
এধরনের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে পারস্য উপসাগর লাগোয়া দেশগুলোতে। এর মধ্যে আছে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহী। দক্ষিণ এশিয়াতে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত গরম আবহাওয়ার দাপট উদ্বেগজনক। এছাড়া আফ্রিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাতেও সাম্প্রতিক কালে চরম-গরমের দাপট অনেক বেড়ে গেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের এই রিপোর্ট কিছুদিন আগে প্রকাশিত হয়েছে সাইন্স অ্যাডভান্সেস (Science Advances) নামক বিজ্ঞান পত্রিকায়। গবেষকরা বিশ্বের ৭৮৭৭টি আবহাওয়া কেন্দ্রে নথিভুক্ত গত ৪০ বছরের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা সম্পর্কিত তথ্য বিশ্লেষণ করে এই রিপোর্ট তৈরি করেছেন। রিপোর্টে গবেষকরা আরো জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা চলতে থাকলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ অসহনীয় গরমের মধ্যে বাস করতে বাধ্য হবেন। [phys.org]
প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার নতুন চ্যালেঞ্জ
জলবায়ু পরিবর্তনের সাম্প্রতিক রিপোর্টগুলো আমাদের ভাবতে বাধ্য করে। দক্ষিণ এশিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন অংশে দুঃসহ গরম এবং চরম আবহাওয়ার নানা ঘটনা যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে হয়তো আমাদের জীবনে গভীর পরিবর্তন আনা দরকার। [আরো পড়ুন: “বিশ্ব উষ্ণায়ন ও তার প্রতিকার ভাবনা”] বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের আবাস নির্মাণ থেকে শুরু করে জীবন পদ্ধতি, খাদ্যখাবার থেকে শুরু করে কাজকর্ম, সবকিছুর মধ্যে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় বদল আনতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন জনিত নতুন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার স্বার্থে এটা এখন মানুষের জন্য জরুরি হয়ে উঠেছে। [ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]